মোহনীয় ও আকর্ষনীয় রুপের অধিকারী মানুষটি চেহারা ঢেকে রেখেছে মাস্ক দিয়ে। অপরুপ চেহারা দেখানোর সুযোগ নেই। অন্যজনের তাকানোরও ফুরসত নেই। সবার মুখে একই আওয়াজ- ‘কি হচ্ছে এসব! মানুষ বলবে, (পৃথিবীর) এর কি হলো?’ (সূরা যিলযালঃ ৩)।

২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ দিন চীনের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্থানীয় কার্যালয় জানায়, দেশটির হুবেই প্রদেশের উহান শহরে অজানা এক ধরনের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। অসুস্থ মানুষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন একটি নতুন ধরনের ভাইরাসে লোকজন আক্রান্ত হচ্ছেন যা ইতোমধ্যে পৃথিবী বাসীর নিকট ছিল অজ্ঞাত। এই ভাইরাসটি করোনা পরিবারের মার্স বা সার্স ভাইরাসের মতো। সম্পূর্ণ নতুন বলে একে ‘নোবেল করোনাভাইরাস’ বলা হয়। কিছুদিন পরে এর আনুষ্ঠানিক নাম দেয়া হয় ‘কোভিড-১৯’।

‘কোভিড-১৯’ খালি চোখে দেখা যায় ন। সাধারণ অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও দেখা যায় না। একে দেখতে হাইরেজুলেশনের যন্ত্রের প্রয়োজন হয়। এই অতি ক্ষুদ্র একটি জীব পৃথিবীর প্রায় সাড়ে ৭০০ কোটি জনগণকে ভয় আর উৎকণ্ঠার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। একটি অনুসম ভাইরাস বিশ্বের দেশগুলোকে ‘আইসোলেশনে’ নিয়ে গেছে।

ভাইরাসটি যাতে না ছড়ায় তাই দেশে দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। ব্যাংকিং সীমিত করা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে মিল-কারখানা। শহর কা শহর লকডাউন করে লোকজনকে স্বেচ্ছায় স্বগৃহে বন্দী থাকতে হচ্ছে। অতি প্রয়োজন না হলে কেউ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না। মানুষের সাথে মেশা তো দূরের কথা। বিস্ময়কর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হল দুনিয়াবাসী যা হলিউড-বলিউড সকল উডের কাহিনীকে হার মানিয়েছে।

কেন এমন হলোঃ মানুষ প্রকৃতিকে মাত্রাতিরিক্ত নিয়ন্ত্রিত করার ফলে প্রকৃতির পাল্টা একশন হল নোবেল করোনাভাইরাস। হোমো সেক্সুয়ালিটি, পুরুষে-পুরুষে ও নারীতে-নারীতে বিবাহ, পশ্চিম ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার অনেক দেশে আইন দ্বারা সিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ পবিত্র কোরআনে সমকামিতাকে আল্লাহ ‘চরম সীমালঙ্ঘন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। আল্লাহ লুত (আঃ) এর জাতিকে গজব দিয়ে ধ্বংস করেছিলেন। যার বর্তমান সাক্ষী হয়ে আছে মৃত সাগর বা ডেড সী। সেই সমকামিতার পুনরাবৃত্তি প্রকৃতি সহ্য করবে কিভাবে?

ভুয়া আশ্বাসের বিনিময়ে জনগনকে বোকা বানিয়ে জনগণের প্রতিনিধি বনে যাওয়া রাজনীতিবিদের ক্ষমতায় গিয়ে কৃত ওয়াদা বেমালুম ভুলে যাওয়া; বিশ্বের কতিপয় দেশের কমন চিত্র। প্রতিশ্রুতির বরখেলাফ প্রকৃতি ভুলে না।

ডিভাইড অ্যান্ড রুল থিওরি দিয়ে ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করেছিল প্রায় দুইশত বছর। পরবর্তীতে একে মডেল থিওরি হিসেবে গ্রহণ করেছেন বিশ্বের অনেক শাসক ও রাজনীতিবিদ। হালের এই শাসক ও রাজনীতিবিদরা দুইটি গ্রুপের মধ্যে পরোক্ষভাবে বিবাদ বাধিয়ে শেষমেশ নিজেই বিচারক হিসেবে আবির্ভূত হন। মানুষের সরলতা কে পুঁজি করে নেতার এই দ্বিচারিতা প্রকৃতি সহ্য করেছে।
বিশ্বের সকল সমুদ্র সৈকতের চিত্র প্রায় একই। নারী-পুরুষের একসাথে গোসল ও ঢেউয়ের তালে তালে নারী গিয়ে পড়ছে পুরুষের উপর আর পুরুষ নারীর উপর, সবাই এখানে নেভার মাইন্ড। প্রকৃতি আর কত মেনে নেবে। বালি দ্বীপের সুনামির ঘটনা ভুলে গেছে এত তাড়াতাড়ি?

নৈতিক পদস্খলন, দুর্বলের উপর সবলের নির্যাতন, পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, ঘুষ নেওয়া, সুদ খাওয়া, সর্বোপরি ক্ষমতার লোভ ও একে দীর্ঘমেয়াদি করতে নানা ছলছাতুরি—কী না করেছি আমরা! সমুদ্র দখল করেছি। করেছি বন উজাড়। পাহাড় কেটে সমতল করে হাই রাইজিং বিল্ডিং করেছি। সব কিছুই প্রকৃতি নীরবে সয়ে গেছে এতদিন।

পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে যুদ্ধ সংঘাত হামলা আর সংকটের খবর প্রচার করেই চলছিল আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো। আলজাজিরা বিবিসি সিএনএন এর লিড নিউজ থাকতো সিরিয়া সংকট, ফিলিস্তিন সংকট, কাশ্মীর ইস্যু, উইঘুর সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, আল-কায়েদা, আইএস, হুজি আরো কত কী! কিন্তু এখন খবরের এই জায়গা গুলো দখল করে নিয়েছে করোনাভাইরাস, শুধুই করোনা।

লকডাউন আজ গোটা পৃথিবী। বাজছে না কোথাও যুদ্ধের দামামা। গোরস্থানের নিরবতা বিরাজ করছে সর্বত্র। হুমকি পাল্টা হুমকির পরিবর্তে সবাই পড়ছে, ইয়া নফছি! ইয়া নফছি!

চলবে…(পরবর্তী পর্বে সমাপনী)।

লেখক- প্রভাষক, আছিরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ।